আয়লা এবং আম্ফানের পরে, এখন 'রেমাল' নামের একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। প্রতিবছরের মতো, বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার মধ্যে আমরা আছি। ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এটি পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর ইঙ্গিত দিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে, এটি আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগর তো বটেই, আরব সাগরেও একটি নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২২ মে নাগাদ আরব সাগর এবং ২৩ মে নাগাদ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। কারণ নিম্নচাপের শক্তি বৃদ্ধির জন্য যে শর্তগুলো রয়েছে, তার মধ্যে বেশ অনেক শর্তই অনুকূল রয়েছে।
বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে পানির তাপমাত্রা অত্যন্ত উচ্চ হয়ে উঠেছে, যা ঘূর্ণিঝড়ের 'চালিকাশক্তি'র উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাগরের পানির তাপমাত্রা যখন ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়, তখন ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি প্রকারে গঠন হতে শুরু করে। এই গরম পানিতে আপাতত নিম্নচাপের শক্তিবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ মে থেকে আমরা এই নিম্নচাপের প্রভাব অনুভব করতে পারি।
কলকাতার আলীপুর আবহাওয়া দপ্তরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা সোমনাথ দত্তের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কোনো লক্ষণ নেই যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে। তারা মন্তব্য দিয়েছেন যে, লক্ষণ যদি উত্পন্ন হয় বঙ্গোপসাগরে, তবেই বলা হবে যে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। প্রথমে লক্ষণ দেখার পর মনে হবে সেটি আদৌ বিপদে পড়বে কিনা।
বর্তমানে এই অবস্থা দেখে বাস্তবায়নে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে পশ্চিমবঙ্গে একটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব অনুমান করা যায় না। তবে, যদি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও উত্তরসংলগ্ন আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় এবং তা উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়, তবে সেটির প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে মিলিত হবে না। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে বৃষ্টিপাতের শুরু ও শেষের সময়সূচি দেখার প্রয়োজন।
গত ১৪ মে, মৌসম ভবন জানিয়েছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল', যা মে মাসের শেষে আছড়ে পড়তে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম 'রেমাল' যা অমানির অর্থ "বালি"। বাংলাদেশে এই ঝড়ের কতটা ভয়াবহ হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় মূলত বর্ষার শুরু এবং শেষের সময়। বাংলাদেশে মৌসুমি বা বর্ষার বায়ুপ্রবাহ আগামী ৩০ মে থেকে ৭ জুনের মধ্যে শুরু হয়।
দিল্লির মৌসম ভবনের পরামর্শ অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় `রেমাল’ আগামী সপ্তাহে আরো শক্তিশালী হতে পারে, যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষভাবে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে এই বিপদটি প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্ষা মৌসুমের শুরুর আগেই ঘূর্ণিঝড় মৌসুম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ বা লঘুচাপের সৃষ্টি হয়নি। এতে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রত্যাশিত ঘূর্ণিঝড়টি ২০ মের পরে সৃষ্টি হলেও, এটি খুবই শক্তিশালী হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি প্রধান উপাদানের মধ্যে ইতোমধ্যে তিনটির উপস্থিতি রয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।
বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল অনুসারে, ২০ থেকে ২৭ মের মধ্যে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।
এদিকে, ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ২০ মে থেকে এই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ স্পষ্ট হতে পারে। তবে এখনো বলা যায় না যে, কোথায় এটি আঘাত হানতে পারে এবং কত গতিতে হতে পারে। অনুমান করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের মধ্যে কোথাও এটি আছড়ে পড়তে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ২৪ মে রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে উপকূল এলাকায়। বৃষ্টি চলতে পারে ২৬ মে পর্যন্ত।
মে মাস মানেই যেন ঘূর্ণিঝড়ের মাস। দেড় দশক আগে ২০০৯ সালের ১৫ মে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে ‘আইলা’। এরপর ২০১৯ সালে তাণ্ডব চালায় ‘ফণী’। এ ছাড়া ২০২০ সালের ১৩ মে আম্ফান। আর ২০২১ সালের ২৬ মে ‘ইয়াস’ আঘাত হানে।
আরও পড়ুন.....
১. কুষ্টিয়ায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে পড়লো খাদে।
২. টাঙ্গাইলে গরুবাহী ট্রাকের ধাক্কা: পুলিশ কনস্টেবল নিহত।
৩. পিরিয়ড হওয়ায় ১২ বচরেরে বোনকে ৩ দিন ধরে পিটিয়ে হত্যা।
৪. প্রাথমিক স্কুলে চালু হচ্ছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা।
৫. কুমিল্লা যুবলীগ নেতা হত্যা, মৃত্যুদণ্ড ৯ জনকে ও যাবজ্জীবন ৯ জনকে দেয় আদালত ।
৬. স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রী সহ চারজন গ্রেপ্তার ।
0 Comments